শাওমি রেডমি নোট ৯ রিভিউ: একটি সাশ্রয়ী মূল্যের চ্যাম্পিয়ন স্মার্টফোন

 


মোবাইল মার্কেটে নিজের জমি শক্ত করে নিজেকে একটি মিড রেঞ্জ স্পেশালিস্ট ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।  মিডরেঞ্জার মার্কেটে রিয়েলমি, স্যামসাং, অনার, মোটোরোলার মত বড় বড় ব্র্যান্ডকে পিছনে ফেলে শাওমি এখন স্মার্টফোন মার্কেটের ভালো একটি জায়গা দখল করে আছে।

শাওমির জনপ্রিয় ফোনগুলোর মধ্যে এখন রেডমি নোট সিরিজ অন্যতম। এবার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি তাদের ‘রেডমি নোট  ৯’ বাজারে ছেড়েছে। ফোনটিতে ২০২০ সালের সকল ট্রেন্ডিং ডিজাইন ও ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, চেষ্টা করা হয়েছে এটি যাতে সেরা মাঝারি বাজেটের ফোন হয়ে ওঠে।

২০২০ সালের মিডরেঞ্জার মার্কেটে নতুন ফোনের মধ্যে রিয়েলমি ৬, হুয়াওয়ে ওয়াই ৭ পি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এম৩০এস-এর মতো ফোনের সঙ্গে টক্কর দিতে হচ্ছে নোট ৯  ডিভাইসকে।

আজ আমরা এই নতুন এই স্মার্টফোনের সম্পূর্ণ রিভিউ এবং আমাদের মতামত আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

 বাজেট সাশ্রয়ী রেডমি নোট ৯ ডিভাইসের বিভিন্ন ফিচার ও স্পেসিফিকেশন —

কাঠামো : প্লাস্টিকের কাঠামোর ডিভাইসটির বডি ডাইমেনশন ১৬৩.৩×৭৭.২××৮.৯ এমএম

নেটওয়ার্ক সমর্থন : জিএসএম, এইচএসপিএ, এলটিই

সিম : ডুয়াল ন্যানো

ডিসপ্লে : ৬ দশমিক ৫৩ ইঞ্চি হোল-পাঞ্চ আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন

ডিসপ্লে রেজল্যুশন : ১০৮০×২৩৪০ পিক্সেল

ওএস : অ্যান্ড্রয়েড ১০

চিপসেট : মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫

অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ : ৪ গিগাবাইট র্যাম সংস্করণে ১২৮

রিয়ার ক্যামেরা : ৪৮,৮,২,২ মেগাপিক্সেল

ফ্রন্ট ক্যামেরা : ১৩ মেগাপিক্সেল

কানেক্টিভিটি : ব্লুটুথ, জিপিএস, এনএফসি, রেডিও, ইউএসবি

ব্যাটারি : নন-রিমুভেবল লিথিয়াম-পলিমার ৫০২০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার, ১৮ ওয়াট চার্জিং সমর্থন

ডিজাইন-
রেডমি নোট ৯  তে আপনারা পেয়ে যাবেন একটি প্রিমিয়াম ডিজাইন। এই ফোনটির পিছনে একটি গ্রেডিয়েন্ট ফিনিশ ব্যাক প্যানেল রয়েছে। এই প্যানেলে আপনি ভালো লাইট রিফ্লেকশন পেয়ে যাবেন। এই ফিনিশিংয়ের জন্যই আপনি ফোনটি থেকে একটি প্রিমিয়াম লুক পাবেন। তবে ব্যাক প্যানেলটি স্মাজ প্রুফ নয়, ব্যবহার করার সময় আপনার হাতের ছাপ ব্যাক প্যানেলে লাগবে। তাই ফোনটিতে একটি ব্যাক কভার লাগিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। শাওমি এই ফোনটির সাথে আপনাকে একটি খুব ভালো না হলেও চলনসই ব্যাক কভার ফোনের বক্সেই দিয়ে দিয়েছে


সামনে প্যানেলে দেওয়া হয়েছে হোল-পাঞ্চ যুক্ত ৬.৬৩ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটি অ্যামোলেড না হলেও যথেষ্ট ভালো। এই ফোনটিতে আপনারা ৪৫০নিট পর্যন্ত ব্রাইটনেস পাবেন এবং সঙ্গে নাইট মোডও রয়েছে যার ফলে রাত্রে কাজ করলে আপনার চোখে সমস্যা হবে না। এই ডিসপ্লেটি একটি মাল্টি টাচ্ ডিসপ্লে।

ডিসপ্লেটির রেসোলিউশন ২৩৪০×১০৮০ পিক্সেল এবং পিপিআই লেভেল ৩৯৫। স্ক্রিন এবং ব্যাক প্যানেলের দিক থেকে ফোনটি খুবই ভালো এবং আপনার হাতে একটি প্রিমিয়াম ফোনের লুক দেবে। তবে ফোনটির ওজন ১৯৯ গ্রাম যার ফলে ফোনটি আপনার হাতে একটু ভারী লাগতে পারে।

ফোনের উপরে রয়েছে একটি সেকেন্ডারি মাইক্রোফোন আর একটি আইআর ব্লাস্টার।

নিচের দিকে থাকছে একটি ইউসি টাইপ-সি পোর্ট, স্পিকার ও একটি ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাক। ডান দিকে ভলিউম রকার, পাওয়ার বাটন এবং বাঁদিকে সিম কার্ড ট্রে।একেবারে পিছনে থাকছে তিনটি ক্যামেরার সেটআপ ও এলইডি ফ্ল্যাশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর মিলবে।

পারফরম্যান্স-
রেডমি নোট ৯ ফোনে মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। রেডমি তার আগের নোট ৮ এর চেয়ে ৩২% দ্রুত জিপিইউ এবং ২২% দ্রুত সিপিইউ বেশি কার্যকর । তবে এই দামের ফোন আপনি স্ন্যাপড্রাগন ৭১০ প্রসেসর আশা করতে পারেন ।  ১২ ন্যানোমিটার অক্টাকোর প্রযুক্তিতে তৈরি এই প্রসেসরটিতে ১.৮ গিগাহার্ৎজের ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় এবং প্রসেসরটি ৩৫% অবধি এনার্জি সাশ্রয়কারী। ফোনটিতে কল অফ ডিউটি, ব্যাটেলফিল্ড, পাবজি মোবাইলের মত হাই গ্রাফিক্সের ভারী গেম খেলতে কোন অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ ফোনটি গেমিং লাভার্সদের জন্য বেশ ভালো।

ভয়েস কল, এসএমএস, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন। একসঙ্গে একাধিক অ্যাপ ব্যবহারেও অসুবিধা হবে না। যদিও এই ফোনে বেশি রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে থাকছে না।

বড় ও ভারি হওয়ার কারণে রেডমি নোট ৯ ব্যবহারে সমস্যা হবে। দুই হাতে এই ফোন ধরে গেম খেলতেও সমস্যা হতে পারে। একটাকা অবেক্ষণ ফোনে কথা বললেও হাতে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যদিও এই ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর সেন্সর ও ফেস আনলক দ্রুত কাজ করবে।

যথেষ্ট উজ্জ্বল এই ফোনের ক্যামেরা। ফোনের হোল পাঞ্চ ডিসপ্লের কারণে ফল স্ক্রিন ভিডিও দেখার সময় সমস্যা হতে পারে। হাই প্রিসেটে এই ফোনে পাবজি মোবাইল খেলা গিয়েছে। ৩০ মিনিট এই গেম খেলার পর ফোনটি সামান্য গরম হয়েছিল। যদিও গেমের গ্রাফিক্সে কোন সমস্যা হয়নি।

রেডমি নোট ৯ অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর উপর বানানো এমআইইউআই ভার্সন ১১ তে কাজ করে। ৫০২০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি রয়েছে এতে। ডিসপ্লের রেজুলেশন কম হওয়ার কারণে ব্যাটারি থেকে দীর্ঘ ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। সাধারণ মানের ব্যবহারে এটি একবার ফুল চার্জে টানা ২ দিন ব্যবহার করা যাবে। ফোনটি ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করলেও ফোনের সঙ্গে দেয়া চার্জারের সক্ষমতা ১০ ওয়াট।

ফোনটিতে  রয়েছে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। সাধারণত এই রেঞ্জের ফোনে টাইপ-সি পোর্ট দেখতে পাওয়া যায় না। তাই এটি এই ফোনটির একটি ভাল দিক বলা যেতে পারে। শক্তিশালী প্রসেসর, ভালো ব্যাটারি, ফাস্ট চার্জিং,  টাইপ-সি পোর্ট, এবং কানেক্টিভিটির সবদিক থেকেই ফোনটি আপনার জন্য একটি ভালো পছন্দ হবে।

ক্যামেরা
আগেই বলেছি এতে থাকছে চারটি রিয়ার ক্যামেরা। এর মূল রিয়ার ক্যামেরাটি ৪৮ মেগাপিক্সেল যাতে ব্যবহার করা হয়েছে । থাকছে এফ/১.৮ অ্যাপার্চারের লেন্স। এর সাথে আছে ৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেন্সর যা ১৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ভিউয়ের ছবি তুলতে সক্ষম। এছাড়া আছে একটি ২ মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো ক্যামেরা এবং একটি ২ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর।

সামনে থাকছে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যার অ্যাপার্চার এফ/২.০। ক্যামেরা ফিচারে থাকছে প্রচলিত সব ফিচারই। পর্যাপ্ত আলোতে এই ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবি মুগ্ধ করার মতো। ছবির ফোকাস, ডিটেইলস এবং ডায়নামিক রেঞ্জ ছিল ঠিকঠাক। এছাড়া এর ম্যাক্রো ক্যামেরায় তোলা ছবিও ছিল অসাধারণ। অল্প আলোতে এর রিয়ার ক্যামেরায় তোলা ছবি খুব বেশি ভালো না হলেও কাজ চালানোর মতো। তবে নাইট মোড চালু করে তোলা হলে আবার অল্প আলোতেও ভালো ছবি দিয়েছে রেডমি নোট ৯। ফ্রন্ট ক্যামেরায় এইচডিআর মোড থাকায় এতেও বেশ ভালো ছবি পাওয়া গেছে। বিউটিফিকেশনের পাশাপাশি ফ্রন্ট ক্যামেরায় থাকছে পোর্টেট এবং প্যানারোমা মোড। এর রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করে ৩০ এফপিএসে ৪কে ভিডিও ধারন করা যাবে।

ব্যাটারি
সারাদিন ব্যবহারে এই ফোনের ব্যাটারি সহজেই পুরা দিন চলবে এই ফোন। এমনকি দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত এই ফোন চার্জ করার দরকার হয়নি । এই সময়ে গেম খেলা ছাড়াও ভিডিও স্ট্রিম, ও ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও তোলা হয়েছিল। আমাদের এইচডি ভিডিও লুপ টেস্টে ১৫ ঘণ্টা ১৬ মিনিট চলেছে এই স্মার্টফোন।

Post a Comment

Previous Post Next Post